Amader Kantho- Bangla Online News Portal and Bangladeshi online news source for Game, Binodon, politics, national, international, lifestyle, sports, and many more factors.

ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

Facebook Facebook Facebook Facebook

বাবুর্চি থেকে ইমাম সবাই মুরাদের নির্যাতনের শিকার

আমাদের কণ্ঠ প্রতিবেদক:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ০৯:২০
murad

নিজস্ব স্টাফদের উঠতে-বসতে গালি, কাপ-প্লেট ছোড়া, চড়-থাপ্পড় দেওয়া ছিল সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের নিত্যদিনের কাজ। এসব কারণে অগ্রাধিকার স্টাফের বেশির ভাগ সদস্যই তার সঙ্গে টিকতে পারেননি। বেতন-ভাতা ভালো থাকলেও শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের কারণে তারা চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলে জানা গেছে। মন্ত্রণালয় ও বাইরে বিভিন্ন সূত্রে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

মন্ত্রিসভার একজন সদস্য হিসাবে পিএস, এপিএস, পিআরও, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, অফিস সহায়ক, বাবুর্চি, অর্ডারলি, জমাদার, ড্রাইভারসহ অনেক ধরনের লোক নিতে পারেন। মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়ে পুরো সেট লোকজন নিলেও ৯৮ শতাংশ তার সঙ্গে টিকতে পারেনি। কিছুদিন পরপরই ব্যক্তিগত স্টাফরা তাকে ছেড়ে গেছেন। একই পদে আট-দশবার করে মুখ বদল হয়েছে।

সদ্য পদত্যাগী প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদের মুখের গালির নমুনা কেমন হতে পারে, এর প্রত্যক্ষ ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই দেখেছেন। কিন্তু তার সঙ্গে যারা কাজ করেছেন, তাদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের চিত্র কেউ দেখেননি। পদে থাকায় এতদিন তার বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খুলেননি। ব্যাপক সমালোচনার মুখে প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানোর পর মন্ত্রণালয় ও বাইরে এসব বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। তার বাবুর্চি পদে ২০১৯ সালের ১৯ মে যোগ দিয়েছিলেন তার আত্মীয় ফরহাদ হোসেন তরফদার। কিন্তু অত্যাচারে টিকতে না পেরে বছর ঘুরার আগেই বিদায় নিয়েছেন টিম থেকে। বুধবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে বলেন, দুর্ব্যবহারের কারণে টেকা যায়নি। নিজেদেরই তো ভাই, কী আর করা। এর বেশি মন্তব্য করতে রাজি হননি ডা. মুরাদের বয়সে বড় ফরহাদ হোসেন।

২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ডা. মুরাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন রেজুয়ান আল হোসাইন। তিনিও মানসিক নির্যাতনের কারণে টিকতে পারেননি। একই বছরের ৩০ জুন তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে যান। বর্তমান বেতন কাঠামোয় ১০ম গ্রেডের চাকরি যথেষ্ট লোভনীয় হওয়ার পরও কেন ছেড়ে গেলেন-এমন প্রশ্নের জবাবে রেজুয়ান জানান, এসব অতীত ইতিহাস আর মনে করতে চাই না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চাকরিতে যোগ দেওয়ার চার মাস পর একবার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলাম। তখন গ্রহণ করেননি প্রতিমন্ত্রী। এরপর দ্বিতীয়বার পদত্যাগ করে চলে আসি। তিনি বলেন, সেখানে কাজ করার মতো পরিস্থিতি ছিল না। তাই চলে এসেছি।

ডা. মুরাদের দুর্ব্যবহার থেকে রেহাই পাননি মসজিদের ইমামও। প্রথমে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পাওয়ার পর বেইলি রোডের মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্টে উঠেছিলেন ডা. মুরাদ। এর পাশেই সুগন্ধা জামে মসজিদ। সেখানে জুমার নামাজ পড়তে গেলে ইমাম তাকে সালাম দেননি। ইমাম কেন বয়ান থামিয়ে তাকে সালাম দেননি, এজন্য তাকে গালাগাল শুনতে হয়েছে। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে সেদিন মসজিদে উপস্থিত একজন বলেন, পরের দিন ইমামকে নিজের ফ্ল্যাটে ডেকে পাঠান তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী। এ তথ্য জেনে মসজিদ কমিটির সদস্যরাও সেখানে যেতে আগ্রহী হন।

তারা ভাবেন, প্রতিমন্ত্রী হয়তো মসজিদের উন্নয়নমূলক কোনো কাজের কথা বলবেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে গালাগালের সম্মুখীন হওয়ায় সবাই তাজ্জব বনে যান। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে বুধবার রাজধানীর বেইলি রোডের সুগন্ধা জামে মসজিদে গেলে ইমামকে পাওয়া যায়নি। এ সময় মসজিদ কমিটির সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন, এটা এমন একটা বিষয়, যা নিয়ে কথা বলা যায় না। দয়া করে এ বিষয়ে আর প্রশ্ন করবেন না। আমি কিছু বলতে পারব না।

প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনজন জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) তাকে ছেড়ে গেছেন। একান্ত সচিব হিসাবে দুজন দায়িত্বে এলেও কয়েক মাস পরই তারা চলে যান। এরপর থেকে আর কোনো অফিসার তার পিএস হিসাবে যোগ দিতে রাজি হননি। তিনজন এপিএস নিয়োগ দিলেও শেষ পর্যন্ত কেউ তার সঙ্গে টিকতে পারেননি। কিছুদিন আগেও তাকে ছেড়ে গেছেন এক কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি বেসরকারি একটি ব্যাংকে যোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তার ব্যক্তিগত সহকারীদের মধ্যে নিসারউল হক, মো. সাকের, রায়হান কামাল, সিদ্দিকুর রহমান কয়েক মাস কাজ করেই তাকে ছেড়ে গেছেন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কারণে। নির্যাতন থেকে রেহাই পাননি তার ব্যক্তিগত দেহরক্ষীরাও। ডা. মুরাদের জন্য আর্থিকভাবেও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন পরিবহণ পুলের ড্রাইভারও। গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় গাড়ির ক্ষতি হওয়া প্রতিমন্ত্রী খ্যাপে গিয়ে ড্রাইভারের বিরুদ্ধে পরিবহণ অফিসে অভিযোগ করে সেই গাড়ির মেরামত খরচ ড্রাইভারের কাছ থেকে নেওয়ার সুপারিশ করেন।

পরিবহণ পুলের ড্রাইভার মাহবুবুর রহমানও প্রতিমন্ত্রীর ড্রাইভার হিসাবে বেশিদিন টিকতে পারেননি। এরপর থেকে পরিবহণ পুল থেকে তার কাছে ড্রাইভারও আসে না। এ পরিপ্রেক্ষিতে বেসরকারিভাবে আরও আট-দশজন ড্রাইভার বদল হয়েছে বলে প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়। এসব অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য জানার চেষ্টায় বুধবার সকালে তাকে একাধিকবার ফোন করলেও সদ্য পদত্যাগী প্রতিমন্ত্রী রিসিভ করেননি। পরিচয় দিয়ে মেসেজ দিলেও সারা দেননি। প্রতিবেদন লেখার শেষ সময়ে চেষ্টা করলে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জিয়াউল হক
চেয়ারম্যান: মিসেস নাজমা হক
ঠিকানা: শাঁহ আলী টাওয়ার (৩য় তলা)
৩৩, কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ ।

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি ।
©২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । আমাদেরকণ্ঠ২৪ ডট কম, জিয়া গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান ।
কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন নাম্বার CRW-24516