Amader Kantho- Bangla Online News Portal and Bangladeshi online news source for Game, Binodon, politics, national, international, lifestyle, sports, and many more factors.

ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২, ০৯ মে, ২০২৫

Facebook Facebook Facebook Facebook

প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ বালু উত্তোলনে

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: মোঃ আরাফাত আজিজ সজিব
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ০৫:১৬
বাংলাদেশ

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের মাত্র এক কিলোমিটারের ভেতরেই অবাধে চলছে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ব্যবসা। দিনে দুপুরে নদীর কিনার থেকে বালু তোলা হলেও নজর নেই প্রশাসনের। এমনকি অভিযোগ জানিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে জানালেন গ্রামবাসি।   

সুনামগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সুরমা নদী। নদীর একপাড়ে পৌর শহরের ওয়েজখালি এলাকা অন্যপাড়ে গৌরারং ইউনিয়নের লক্ষণশ্রী এলাকার দরিদ্র গুচ্ছগ্রাম। এই গ্রামের মানুষ রাতে ঘুমাতে পারেন না। শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা ঘুমের মধ্যে আঁতকে উঠেন। কারণ গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদীতে দিনে রাতে সমানতালে বিকট শব্দে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে চলে বালু তোলার উৎসব।দিনে দুপুরে একের পর এক বাল্কহেড নৌকা লোড করে নিয়ে প্রতিদিন বিক্রি করা হচ্ছে ১০/১২ লক্ষ টাকার বালু। গ্রামের পাশ থেকে বালু তোলা অব্যাহত থাকায় ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার আশংকা করছেন গুচ্ছগ্রামে পুনর্বাসিতসহ স্থানীয়রা। বিষয়টি নিয়ে গ্রাম থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে অভিযোগ করলেও ড্রেজারের তাণ্ডব বন্ধ করতে পারেননি বলে জানান তারা। 

গুচ্ছগ্রামের গুলশানা বলেন, বাচ্চার ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে বোমা মেশিনের শব্দে। বাচ্চারা কীভাবে ঘুমাবে আমরা বড়রাই ঘুমাতে পারি না। নদী থেকে বালু তোলার কারণে যে কোন দিন আমাদের ঘরবাড়ি নদীতে চলে যাবে।  লক্ষণশ্রী গ্রামের শ্রী সুভাস বলেন, আমরা গরিব এলাকার মানুষ। আমাদের কথা কেউ শুনে না। নদীর পাড়ে আমাদের বাড়ি। দিনের পর দিন গ্রামের পাশ থেকে বালু তোলা হচ্ছে, এতে আমাদের ঘরবাড়ি, জমি সব ভেঙে যেতে পারে। একবার ভাঙন ধরলে আর কেউ ফেরাতে পারবে না। 

এক বীর মুক্তিযুদ্ধা বলেন, আমরা প্রথমে বাধা দিয়েছি। নিজেরা লাঠিসোঠা নিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছি। কিন্তু তারা কেউ শুনে না। ৭/৮ টা নৌকা দিয়ে আমাদের ঘর ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে। পরে আমরা ইউএনও স্যারের কাছে গিয়ে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়েছি। ইউএনও স্যার বললেন, ব্যবস্থা নিবেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। 

একই কথা বললেন গুচ্ছগ্রাম সমিতির সভাপতি রইছ মিয়া। তিনি বলেন, গ্রামের পক্ষ থেকে ইউএনও স্যারকে বলার পর তিনি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মেম্বারকে দায়িত্ব দেন বালু উত্তোলন বন্ধ করার। অভিযোগ জানানোর পর দু’একটা নৌকা থেকে বিশটি নৌকায় বালু উত্তোলন শুরু হয়। মেম্বার আমাদের বলে দিয়েছে, তাদের উপরে হাত আছে তাই বন্ধ করা যাবে না। 

জানা যায়, সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের মাটি ভরাটের জন্য নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলনের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে একটা অনুমতি নেয়া আছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অন্য আরেকটা দল ড্রেজিং করে গত ৪ মাস ধরে নিয়মিত বালু তোলে অন্যত্র বিক্রি করছেন বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একসাথে ৩টি বাল্কহেডে ৬ টি বোমা বা ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী থেকে বালুমাটি উত্তোলন চলছে। পাড়ে বাঁধা সিরিয়ালে থাকা আরও কয়েকটি বাল্কহেড। সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পরও দেদারসে বালু তুলছেন তারা। গ্রামের পাশ থেকে ড্রেজিং করে এভাবে বালু তোলার অনুমতি কার কাছ থেকে পেয়েছেন জানতে চাইলে, শ্রমিকরা জানান, সরকারি প্রকল্প ভরাটের কাজ করছেন তারা। কাগজপত্র দেখতে চাইলে কিছুই দেখাতে পােও নি তারা। তবে কারা করাচ্ছে এই কাজ তা জানা যায়নি। আধা ঘন্টা পর একটি নৌকা লোড হয়ে গেলে ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে জেলা পরিষদের পুকুর ভরাটের আনলোড স্টেশন ছাড়িয়ে নৌকা নিয়ে আব্দুজ জহুর সেতু পার হয়ে চলে যায়। এদিকে এদিনই বড়পাড়া পাকিস্তানের ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ড্রেজিং থেকে বালু উত্তোলনের পর একটি আনলোড স্টেশন। যেখান থেকে প্রত্যেকদিন একাধিক নৌকার বালুমাটি আনলোড হয়। স্থানীয়রা জানান, আশপাশের এলাকা থেকে ড্রেজিং করে বালুমাটি এনে এই স্টেশনে বিক্রি হয়। 

এদিকে অনুমতির বাইরে বালু উত্তোলন ও বিক্রির বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন টুকের বাজার নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আতাউর রহমান। তবে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা পারভীন শোনালেন সীমাবদ্ধতার গল্প। তিনি বলেন, আমরা এই জায়গায় কয়েকবার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করেছি। কিন্ত আমরা চলে আসলেই আবার তারা বালু উত্তোলন করে। ২৪ ঘন্টা সেখানে বসে থাকলে অফিসের অন্যান্য কাজ বন্ধ রাখতে হবে। 

কঠোর বার্তা দিয়ে জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বললেন,  সরকার এসব অবৈধ কাজ রোধের জন্য আইন করে দিয়েছে। আমরা নদী থেকে বালু উত্তোলনকারিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবো। তবে সেখানে সরকারি প্রকল্পের মাটি ভরাটের জন্য একটি অনুমতি দেয়া আছে। এর বাইরে কোথাও বালু বিক্রি হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জিয়াউল হক
চেয়ারম্যান: মিসেস নাজমা হক
ঠিকানা: শাঁহ আলী টাওয়ার (৩য় তলা)
৩৩, কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ ।

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি ।
©২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । আমাদেরকণ্ঠ২৪ ডট কম, জিয়া গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান ।
কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন নাম্বার CRW-24516