Amader Kantho- Bangla Online News Portal and Bangladeshi online news source for Game, Binodon, politics, national, international, lifestyle, sports, and many more factors.

ঢাকা, শনিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

Facebook Facebook Facebook Facebook

যেভাবে আবিষ্কার হলো পারমাণবিক বোমা

আমাদেরকণ্ঠ ডেস্ক:
প্রকাশিত: বুধবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:২৫
পারমাণবিক বোমা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনায় ও মধ্যভাগে হিটলার জার্মানি ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ইহুদি মানুষদের ওপর অমানবিক অত্যাচার করতে শুরু করলেন। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বহু ইহুদি বিজ্ঞানী অপমান, অবজ্ঞা, ও অত্যাচারের শিকার হয়ে নানা দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। এই সময়ে আমেরিকা ওই সব সর্বহারা বিজ্ঞানীদের আশ্রয় দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল।

সে সময় যে সব বিজ্ঞানী আমেরিকায় আশ্রয় নেন তাঁরা হলেন, আইনস্টাইন, টেলার, লিজে মাইটনার, লিজার্ড, অটোফ্রিস প্রমুখ। এঁরা বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের অন্যতম। এইসব বিজ্ঞানীরা একটা মারাত্মক সম্ভাবনার কথা ব্যক্ত করছিলেন। জার্মানিতে হিটলার তার বৈজ্ঞানিকদের নিয়ে এমন একটি মারণাস্ত্র নির্মাণের চেষ্টায় আছেন, যার দুটি একটি ব্যবহার করেই তামাম বিশ্বকে করায়ত্ত্ব করতে পারবেন। এই অস্ত্র আর কিছুই নয়, সেটি হল পরমাণু।

আইনস্টাইন একটি কঠিন সংকল্প নিয়ে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করলেন। তখন রুজভেল্ট ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আইনস্টাইনের কাছ থেকে রুজভেল্ট সংবাদ পেলেন হিটলার পারমাণবিক বোমা বানাবার জন্য কিছুটা পথ এগিয়ে গেছেন। এরপর যেদিন বোমাটি সত্যি সত্যি তৈরি হয়ে যাবে সেদিন হিটলার সানন্দে একটির পর একটি শহর ধ্বংস করবেন। মানুষের সকল কীর্তিকে তরল গলিত লাভায় পরিবর্তিত করবেন।

রুজভেল্ট হোয়াইট হাইসের বিশাল চত্বরে পায়চারী করেন। কপালে চিন্তার ভাঁজ। হিটলার যদি একবার তার বিজ্ঞানীদের দিয়ে ওই মারণাস্ত্র তৈরি করে ফেলতে পারে, তাহলে পৃথিবীর ইতিহাস পাল্টে যাবে। সমস্ত পৃথিবী সেই অহংকারী একনায়কের পায়ের তলায় লুটিয়ে পড়তে বাধ্য হবে। অতএব সেই ভয়ঙ্কর সম্ভাবনাকে দমিয়ে রাখতে হবে। রুজভেল্ট বৈজ্ঞানিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেন।

চোখের সামনে এত অভিজ্ঞ মানুষের মুখ দেখে প্রেসিডেন্টের মুখখানাও আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠল। প্রেসিডেন্ট দেশের অর্থভাণ্ডার বিজ্ঞানীদের সামনে খুলে দিলেন। আবিষ্কারের সূত্রটি অত্যন্ত জটিল। যাদের বিজ্ঞানের সমস্ত বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান আছে তারাই এই বোমা তৈরি করতে পারবেন। কিন্তু বিজ্ঞানের সব শাখায় যাদের বুৎপত্তি আছে তাদের সংখ্যা আমাদের অতি নগন্য।

এমনই এক বিজ্ঞানী ছিলেন রবার্ট ওপেনহাইমার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ওপেনহাইমারকে পরমাণু বোমা তৈরি করতে অনুরোধ করলেন। ওপেনহাইমার রাজি হলেন এ কাজ করতে। ওপেনহাইমোরের নেতৃত্বে আমেরিকার প্রধান প্রধান বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে গবেষণা করতে আগ্রহী হলেন। গবেষণার জন্য বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ দুশ কোটি ডলার। আর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ওই বোমা নির্মাণের কাজে পঁচাত্তর হাজার মানুষ যোগ দিলেন। ওপেন হাইমার ও তাঁর সহকারীরা নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। কয়েক শত বৈজ্ঞানিকের তপস্যা ও নিরলস পরিশ্রমের ফলস্বরূপ দলটি পারমাণবিক বোমা তৈরিতে সক্ষম হলেন।

মারণাস্ত্র হিসেবে এটি কতটা শক্তিশালী ও মারাত্মক হবে সেটা পরীক্ষা করতে হবে। ১৯৪৫ সালের ১৭ জুলাই সমস্ত বিজ্ঞানীরা সমবেত হলেন নেস আলমাস পাহাড়টির সামনে, এক ঐতিহাসিক মারণযজ্ঞ দেখবেন বলে। সকলের সামনে বোমাটি ফাটানো হলো। সকলে ভয়ে কেঁপে উঠলেন। তাদের কল্পনার অতীত হয়েছে তাদের নির্মিত বোমাটি।

রবার্ট ওপেনহাইমার ক্রুদ্ধ হলেন এই মারণাস্ত্রের বিধ্বংসী রূপ দেখে। তাঁর প্রতিবাদী মন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠল। তিনি প্রতিবাদ করে উঠলেন। তিনি প্রতিবাদপত্র পাঠালেন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের কাছে। তাঁর প্রতিবাদপত্রটি ছিল এই রকম প্রিয় প্রেসিডেন্ট, আপনার ইচ্ছানুযায়ী আমরা অর্থাৎ একনিষ্ঠ একাগ্রতায় বিগত দিনগুলিতে পরমাণু বোমা আবিষ্কারের সঙ্গে নিজেদের নিযুক্ত রেখেছি। এই অস্ত্রটি যাতে হিটলার ব্যবহার করতে না পারে তার জন্য এটি আমেরিকার হাতে আসা একান্তই প্রয়োজন। এখন হিটলার এটম বোমার অধিকারী তো হতেই পারেন নি, বরং তিনি এখন বিধ্বস্ত। অন্যদিকে আমরা আপনারা হাতে বোমাটিকে তুলে দিতে পেরেছি। ওই বোমার বিধ্বংসী ক্ষমতার কাছে পৃথিবীর যে কোন বিস্ফোরক দ্রব্যই নিতান্ত তুচ্ছ। এ অস্ত্রকে যুদ্ধক্ষেত্রে যদি একবার প্রয়োগ করা শুরু হয়, তাহলে কি অজস্র নিরপরাধ নরনারীর প্রাণ হরণ করা হবে, মানবিকতাকে পশুদের দ্বারা নির্মিত গারদে বন্দী করে রাখা হবে। এই কারণে এই বোমা আবিষ্কারকদের একজন হওয়ার গর্বের পরিবর্তে আমি এক ধরনের অপরাধবোধ অনুভব করছি। আপনার কাছে তাই আমাদের সকলের অনুরোধ এই যে, পারমাণবিক বোমা নির্মাণ এখনই বন্ধ করুন এবং এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হাকে। ইতি আপনাদের অনুগত রবার্ট ওপেনহাইমার

প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ওপেনহাইমারের এই আবেদনকে মর্যাদা দিলেন না। রুজভেল্টের পর আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হলেন হ্যারি ট্রুম্যান। তিনি জাপানের গুরুত্বপূর্ণ দুটি শহর হিরোসিমা ও নাগাসাকির উপর এটমবোমা নিক্ষেপ করলেন। যার ভয়ঙ্কর পরিণতি কি হয়েছিল। আমরা সবাই জানি। এটমবোমার আবিষ্কারের জন্য অনেক কষ্ট স্বীকার করেছিলেন ওপেনহাইমার। কিন্তু প্রতিবাদের ফলস্বরূপ মার্কিন সরকার তাকে নজরবন্দী করে রেখেছিল।

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জিয়াউল হক
চেয়ারম্যান: মিসেস নাজমা হক
ঠিকানা: শাঁহ আলী টাওয়ার (৩য় তলা)
৩৩, কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ ।

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি ।
©২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । আমাদেরকণ্ঠ২৪ ডট কম, জিয়া গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান ।
কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন নাম্বার CRW-24516