Amader Kantho- Bangla Online News Portal and Bangladeshi online news source for Game, Binodon, politics, national, international, lifestyle, sports, and many more factors.

ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

Facebook Facebook Facebook Facebook

চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা করা হয় সাংবাদিক ফাগুনকে

জামালপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১০ জুন, ২০২১, ০৯:১৩
সাংবাদিক ফাগুনকে

জামালপুরে বহুল আলোচিত সাংবাদিক ইহসান ইবনে রেজা ফাগুন হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই। ট্রেনে একটি ছিনতাইকারী চক্র ছিনতাইয়ের পর চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে তাকে হত্যা করে বলে জানিয়েছেন জামালপুরের পুলিশ সুপার এমএম সালাহ উদ্দীন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে পিবিআই জামালপুরের কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান তিনি। মামলাটি এক বছর আট মাস রেলওয়ে পুলিশের কাছে থাকার পর চার মাস আগে পিবিআইয়ের কাছে আসে।

পুলিশ সুপার এমএম সালাহ উদ্দীন জানান, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ময়মনসিংহের তারকান্দা উপজেলার আব্দুল মজিদের ছেলে মো. সোহরাব মিয়া গাজীপুরের শ্রীপুর থানার একটি মামলায় গ্রেফতার হয়। তাকে ফাগুন হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তার জবানবন্দিতে উঠে এসেছে- হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল পাঁচজন। এরা ট্রেনে সংঘবদ্ধভাবে ছিনতাই ও চুরির সঙ্গে জড়িত। খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ কিংবা চেতনানাশক মিশিয়ে যাত্রীদের অচেতন করে টাকা, মোবাইলসহ মূল্যবান মালামাল হাতিয়ে নেয়াই এদের কাজ। সাংবাদিক ফাগুনের ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছে। তার সঙ্গে মোবাইল-ক্যামেরাসহ মূল্যবান মালামাল থাকায় সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীদের টার্গেট হয়েছিলেন তিনি।

সোহরাব মিয়াকে জবানবন্দিতে জানায়, সে চার বছর ধরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুরে থাকত। আসামি মাজহারুল ইসলাম রুমানও তার সঙ্গে থাকত। আরেক আসামি শফিক খান আন্তঃজেলা অজ্ঞান পার্টির সক্রিয় সদস্য ও ছিনতাইকারী। শফিক খানের নেতৃত্বেই সোহরাব, রুমান, নজরুল ও শফিকুল ট্রেনে ও বাসে যাত্রীদের মোবাইল, টাকাসহ মূল্যবান মালামাল ছিনতাই-চুরি করত।

সে আরো জানায়- ঘটনার দিন বিকেলে শফিক খানের বাড়িতে পাঁচজন মিলিত হয়। বিকেলে নয়নপুর থেকে তারা গফরগাঁও রেলস্টেশনে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ট্রেনে উঠে সাংবাদিক ফাগুনকে টার্গেট করে। ফাগুন তখন তার সিটে বসে ল্যাপটপ চালাচ্ছিলেন। ওই সময় সোহরাব, শফিক ও রুমান তার পাশে এসে দাঁড়ায়। নজরুল ও শফিকুল দাঁড়ায় পাশের সিটের কাছে। আউলিয়া নগর স্টেশনে ফাগুনের পাশের যাত্রী নেমে যান। তখন শফিক তার পাশে বসে কথা বলে ভাব জমাতে থাকে। ওই সময় সোহারাব মিয়া, রুমান ও শফিকুল ট্রেনের দুই সিটের ফাঁকা জায়গায় বসে তাস খেলা শুরু করে। ময়মনসিংহ রেলস্টেশনের কাছাকাছি গিয়ে তারা তাস খেলা বন্ধ করে দেয়। ওই সময় অনেক যাত্রী নেমে যান এবং নতুন করে ৩-৪ জন ট্রেনে ওঠেন।

সোহরাব জানায়, ট্রেন ছাড়ার আগে তার হাতে ১০০ টাকা দিয়ে সবার জন্য কোক কিনে আনতে বলে শফিক। সোহরাব ট্রেন থেকে নেমে ছটি কোকের বোতল কিনে একটি বোতলের ভেতর ঘুমের ওষুধ মেশায়। শফিক খান ঘুমের ওষুধ মেশানো বোতল ফাগুনকে খাবারের জন্য দিলে প্রথমে তিনি রাজি হননি। পরে সবাই মিলে অনুরোধ করলে ফাগুন অর্ধেক কোক খেয়ে রেখে দেন। আসামি রোমান সেই বোতলটি ফেলে দেয়। ট্রেন ময়মনসিংহ স্টেশন ছাড়ার পর ফাগুন তার ল্যাপটপ বন্ধ করে ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখেন এবং মোবাইলে কথা বলেন। এরপর আসামিরা সবাই মিলে ফাগুনের সঙ্গে গল্প করতে থাকে। বিদ্যাগঞ্জ স্টেশনে পৌঁছানোর পর ফাগুন তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তখন আসামিরা তার মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি পুরোপুরি অচেতন না হওয়ায় তারা সফল হয়নি। এরই মধ্যে ট্রেন নুরুন্দি স্টেশনে গিয়ে থামলে আসামিরা ও ফাগুন ছাড়া সব যাত্রী নেমে যান।

সে আরো জানায়, নুরুন্দি স্টেশন ছাড়ার পর ফাগুনের পকেট থেকে কৌশলে মোবাইলটি নিয়ে নেয় সোহরাব। রুমান ও শফিকুল নিয়ে নেয় তার পকেটে থাকা ১২০০ টাকা। শফিক খান তার ব্যাগ ধরে টান দিতে চাইলে ফাগুন উঠে ট্রেনের দরজায় গিয়ে ব্যাগসহ দাঁড়িয়ে থাকেন। আসামিরাও তার পেছন পেছন ট্রেনের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। ট্রেন নান্দিনা স্টেশনের কাছাকাছি আসার পর শফিক ও রুমান ধাক্কা দিয়ে ফাগুনকে ট্রেন থেকে ফেলে দেয়। পরে নান্দিনা স্টেশনে আসামিরা ট্রেন থেকে নেমে সিএনজিতে চড়ে ময়মনসিংহ ব্রিজে যায়। আবার তারা ময়মনসিংহ থেকে বাসে করে গাজীপুরে ফেরে।

জবানবন্দিতে সোহরাব জানায়, শফিক খান প্রত্যেককে ২০০ টাকা করে দেয় এবং সোহরাব মিয়াকে ফাগুনের মোবাইলটি বিক্রি করে দিতে বলে। ল্যাপটপসহ ব্যাগটি শফিক নিজের কাছেই রাখে। পরদিন দুপুরে সোহরাব ওই মোবাইলে নিজের সিমটি ঢুকিয়ে ব্যবহার করে। তিনদিনেও বিক্রি করতে না পেরে সে মোবাইলটি রুমানের কাছে দেয়। পরে রুমান মোবাইলটি ২৭০০ টাকায় বিক্রি করে।

পুলিশ সুপার এমএম সালাহ উদ্দীন আরো জানান, বাকি আসামিদের গ্রেফতার ও লুট করা মালামাল উদ্ধারের পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিগগিরই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

নিহত সাংবাদিক ফাগুনের বাবা কাকন রেজা বলেন, একজন মানুষকে চেতনানাশক খাইয়ে সহজেই মালামাল লুট করা যায়। ট্রেন ও বাসে যারা এ কাজ করে তারা কখনো হত্যা করে না। এর পেছনে পরোক্ষভাবে অন্য কেউ ইন্ধন দিয়েছে। আমার ছেলেকে হত্যার আগে একটি অনুসন্ধানী সংবাদ নিয়ে আমাকে হুমকি দেয়া হয়েছিল। হুমকিদাতার এ হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।

তরুণ সাংবাদিক ইহসান ইবনে রেজা ফাগুন রাজধানীর তেজগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বিবিএ প্রফেশনাল ২য় সেমিস্টারের ছাত্র ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি সংবাদমাধ্যম প্রিয় ডটকমে সাব এডিটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

২০১৯ সালের ২১ মে বিকেলে তেজগাঁও থেকে নিজ বাড়ি শেরপুরে যাওয়ার জন্য জামালপুরগামী কমিউটার ট্রেনে ওঠেন। ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাবা কাকন রেজার সঙ্গে শেষবার কথা বলেন ফাগুন। এরপর থেকেই তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন জামালপুরের নান্দিনা রেলস্টেশনের কাছে রানাগাছা মধ্যপাড়া গ্রামে রেললাইনের উত্তর পাশে ফাগুনের লাশ পাওয়া যায়। রেলওয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে জামালপুর রেলওয়ে থানায় মামলা করেন।

জিএ

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জিয়াউল হক
চেয়ারম্যান: মিসেস নাজমা হক
ঠিকানা: শাঁহ আলী টাওয়ার (৩য় তলা)
৩৩, কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ ।

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি ।
©২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । আমাদেরকণ্ঠ২৪ ডট কম, জিয়া গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান ।
কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন নাম্বার CRW-24516