Amader Kantho- Bangla Online News Portal and Bangladeshi online news source for Game, Binodon, politics, national, international, lifestyle, sports, and many more factors.

ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Facebook Facebook Facebook Facebook

শ্রদ্ধাঞ্জলী: নকলার একজন আলোর বাতিঘরের প্রস্থান

মো: জিয়াউল হক:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৫ জুন, ২০২১, ০১:০৫
শ্রদ্ধাঞ্জলী: নকলার একজন আলোর বাতিঘরের প্রস্থান

সব মিলিয়ে বিশ বছরেরও বেশি শিক্ষাজীবন। বিশ বছরে কত শিক্ষককে পেয়েছি, কত জনের কাছে পড়েছি, অনেকের নাম হয়তো মনে করতে পারব না। এতসব শিক্ষককের ভিড়ে সবাই প্রিয় হতে পারেননি। সবাইকে ভাল লাগেনি। কিন্তু কিছু কিছু মানষ থাকেন, তাদের ব্যক্তিত্বই তাঁদেরকে ভাল লাগাতে বাধ্য করে। আকাশে লক্ষ কোটি তারার ভিড়ে যেমন ধ্রুব তারাকে খুব সহজে আলাদা করে চেনা যায়। তেমনি বিশ বছরের শিক্ষজীবনের বহু শিক্ষক থেকে প্রিয় শিক্ষক বেছে নিতে কষ্ট করতে হয় না একটুও।

তিনি শ্রী সুবল চন্দ্র সাহা। আমাদের সুবল স্যার। শেরপুরের নকলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঁচ বছর তাঁকে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছি। তিনি এখনও আমার অন্তরাত্মায় শিক্ষক হিসেবে আছেন। দেহগতভাবে গতকাল লোকান্তরিত হলেও তাঁর শিক্ষা তো আমার ভেতর আছে। তাই আমি ‘শিক্ষক ছিলেন’ কথাটি এখানে কিংবা কোথাও বলবো না।

সুবল স্যারসহ আমার জীবনের সব প্রিয় শিক্ষকগুলো ধীরে ধীরে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিচ্ছেন। কিন্তু তাদের স্মৃতিগুলো এখনো চোখের সামনে ভাসে। নীরবে নিভৃতে যখন অতীতে ফিরে যাই তখন তাঁদের উপস্থিতি চিন্তায় আপনা-আপনি চলে আসে। নিজের জীবনের সাথে, স্মৃতিরাজির সাথে, অন্তরাত্মার সাথে তাঁরা মিশে আছেন আমার অস্তিত্বের মতো সত্য হয়ে।

একজন ছাত্রের সাথে একজন শিক্ষকের কত অসংখ্য স্মৃতি জড়িয়ে থাকে। বিশেষ করে স্কুল জীবনের শিক্ষকদের সাথে। মাধ্যমিক পড়ুয়া সেই সরল কোমল প্রাণে একজন শিক্ষক যে কত গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ, তা কেবল আমরা টের পাই আমাদের কর্মজীবনে বা মধ্য বয়সে, যখন সেইসময়ের সাথে আমাদের বর্তমানের পার্থক্য খুঁজি।

ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক পৃথিবীতে একটি ব্যতিক্রমী সম্পর্ক। এ-শুধু দাতা-গ্রহীতার সম্পর্ক নয়, এর চেয়ে ঢের বেশি। সুবল স্যার আপাদমস্তক শিক্ষক ছিলেন। তিনি কখনও শিক্ষা ব্যতীত অন্য কোনো বিষয়ে মনোযোগী ছিলেন না। একজন শিক্ষকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শিক্ষাকে আনন্দের মাধ্যম করে তোলা, স্যারের এ-গুণটি ছিলো। শ্রুতিমধুর ভাষণ দিয়ে তিনি ছাত্রদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতেন।

স্যারের পুরো নাম শ্রী সুবল চন্দ্র সাহা। আমরা সুবল স্যার নামে ডাকতাম। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালীন স্যার আমাদের বাংলা পড়াতেন। সব শিক্ষককে সব ছাত্র ছাত্রী সমানভাবে মনে রাখেনা বা ভালবাসে না। সুবল স্যার সেই অল্প কজন শিক্ষকদের একজন সব শিক্ষার্থী যাকে ভালোবাসতেন।

সুবল স্যার গতকাল বার্ধক্যজনিত কারণে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। তিনি আর কোনদিন ঘাড় বাঁকা করে মুচকি হেসে, জিজ্ঞেস করবেন না, 'কেমন আছো তুমি? কবে আসছো? আছ কয়েকদিন? না কি আবার দৌড় দিবা ঢাকায়? কোথায় আছো এখন? বাসায় আইসো।

স্কুল জীবনে স্যার আমাকে তুই ও তুমির মিশেলেই ডাকাডাকি করতেন। দুষ্টুমি করে ধরা গেলে সুবল স্যার এর একটাই বাণী ছিল আমার প্রতি, 'আল্লায় তোরে বান্দরই বানাইছে, খালি লেজটাই দেয় নাই।' শেষ কয়েকবছর যখন দেখা সাক্ষাৎ কমে যেতে লাগলো, তখন দেখা হলে তুমি ডাকা শুরু করলেন। ক্লাসরুমে যতটা কড়া, বাইরে আবার ঠিক ততটাই লাজুক আর বিনয়ী মানুষ ছিলেন।

স্যার প্রথাগত শিক্ষক ছিলেন না। তাঁর ভেতর বহুমাত্রিক জ্যোতির্ময়তা ছিল। তিনি ছিলেন দখিনের অনিন্দ্য বহুমাত্রিক জ্যোতির্ময়। নিরস পাঠ্যবইয়ের শুষ্ক গল্প তিনি রসালো করে ছাত্রদের মনোযোগ আকর্ষণ করতেন তাঁর জাদুকরী শব্দশক্তি দিয়ে। সুবল স্যার আমার হৃদয়ে অমলিন একজন জ্যোতির্ময় শিক্ষক।

লেখক: নকলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯২ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জিয়া গ্রুপ

 

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জিয়াউল হক
চেয়ারম্যান: মিসেস নাজমা হক
ঠিকানা: শাঁহ আলী টাওয়ার (৩য় তলা)
৩৩, কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ ।

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি ।
©২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । আমাদেরকণ্ঠ২৪ ডট কম, জিয়া গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান ।
কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন নাম্বার CRW-24516