Amader Kantho- Bangla Online News Portal and Bangladeshi online news source for Game, Binodon, politics, national, international, lifestyle, sports, and many more factors.

ঢাকা, শনিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

Facebook Facebook Facebook Facebook

স্মরণ: একজন আদর্শ শিক্ষকের চিরবিদায়

মো. তৌহিদুল আলম:
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১৫ জুন, ২০২১, ০৩:০২
স্মরণ: একজন আদর্শ শিক্ষকের চিরবিদায়

একজন ছাত্রের সাথে একজন শিক্ষকের কত অসংখ্য স্মৃতি জড়িয়ে থাকে। বিশেষ করে স্কুল জীবনের শিক্ষকদের সাথে। মাধ্যমিক পড়ুয়া সেই সরল কোমল প্রাণে একজন শিক্ষক যে কত গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ, তা কেবল আমরা টের পাই আমাদের কর্মজীবনে বা মধ্য বয়সে, যখন সেইসময়ের সাথে আমাদের বর্তমানের পার্থক্য খুঁজি।

শিক্ষকদের আচরণ আর আদর্শভেদে, সব শিক্ষককে সব ছাত্র ছাত্রী সমানভাবে মনে রাখে না বা ভালবাসে না। প্রকৃতিগত কারনেই সব শিক্ষকও আবার সব ছাত্র ছাত্রীর কথা সমানভাবে মনে রাখতে পারেন না। সুবল স্যার সেই অল্প কজন শিক্ষকদের একজন যাকে আপনি ভুলতে পারবেন না।

সুবল চন্দ্র সাহা। আমার প্রিয় সুবল স্যার। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালীন সময়ে নকলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে আমার ইংরেজি শিক্ষক। বাংলাও পড়িয়েছেন বেশ কিছু দিন। উনি আমার বাবা-মা দুজনের শিক্ষকও ছিলেন।

সুবল স্যার গতকাল চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আর কোনদিন ঘাড় বাঁকা করে, মুচকি হেসে, জিগ্যেস করবেন না, 'কেমন আছো তুমি? কবে আসছো? আছ কয়েকদিন? না কি আবার দৌড় দিবা ঢাকায়? কোথায় আছো এখন? বাসায় আইসো।'

স্কুল জীবনে স্যার আমাকে তুই, তুমির মিশেলেই ডাকাডাকি করতেন। দুষ্টুমি করে ধরা গেলে সুবল স্যার এর একটাই বানী ছিল আমার প্রতি, 'আল্লায় তোরে বান্দরই বানাইছে, খালি লেজটাই দেয় নাই।' শেষ কয়েকবছর যখন দেখা সাক্ষাৎ কমে যেতে লাগলো, তখন দেখা হলে তুমি ডাকা শুরু করলেন। ক্লাসরুমে যতটা কড়া, বাইরে আবার ঠিক ততটাই লাজুক আর বিনয়ী মানুষ ছিলেন।

কি গভীর আদর মেশানো সেইসব শাসন! কি নিখাঁদ স্যারের সেই ভালোবাসা! কি অসীম দায়িত্ববোধ সম্পন্ন তার শিক্ষক জীবন! মাথার উপর ছায়া হয়ে থাকা মানুষগুলো একে একে সব সরে যাচ্ছেন। মাত্র কিছুদিন আগে স্বপন স্যার আর গতকাল চলে গেলেন সুবল স্যার।

প্রায় বিশ বছর ধরে শিক্ষকতা পেশায় আছি। প্রতিবছর বিভিন্ন সময়ে আমার ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হই, 'আপনি কেন শিক্ষক হলেন?' অল্প কথার উত্তরে বলি 'I love teaching.' এখন থেকে বলবো, 'আমি যখন তোমাদের মতন ছাত্র ছিলাম, তখন আমার স্বপন স্যার, সুবল স্যারের মতন শিক্ষক ছিলেন। তাদের জন্যই আজ আমিও শিক্ষক।' সত্যি বলতে শিক্ষকতার প্রতি আকর্ষণ উনাদের কাছ থেকেই পাওয়া।

এক সপ্তাহ আগে উনার বাসার সামনেই স্যারের সাথে আমার শেষ দেখা। 'শরীরটা এখন কেমন স্যার?' জিগ্যেস করতেই বললেন, 'বেশি ভালো না রে বাবা.. সময় শেষ।' স্যার লুকানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু আমি দেখছিলাম স্যারের দু চোখ ভারি হয়ে আছে। যাওয়ার আগে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, 'ভালো থাইকো।'

স্যার আপনার হাতের স্পর্শ আমি এই মুহুর্তে টের পাচ্ছি। ওপারে আপনি নিশ্চয়ই ভাল থাকবেন। আপনার জন্য অশেষ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।


লেখক: নকলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯২ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও স্কলাস্টিকা স্কুলের সাবেক শিক্ষক

 

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জিয়াউল হক
চেয়ারম্যান: মিসেস নাজমা হক
ঠিকানা: শাঁহ আলী টাওয়ার (৩য় তলা)
৩৩, কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ ।

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি ।
©২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । আমাদেরকণ্ঠ২৪ ডট কম, জিয়া গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান ।
কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন নাম্বার CRW-24516