Amader Kantho- Bangla Online News Portal and Bangladeshi online news source for Game, Binodon, politics, national, international, lifestyle, sports, and many more factors.

ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Facebook Facebook Facebook Facebook

গাভির খামারে সফল মাহামুদুল, গ্রামের অন্যরাও হাঁটছেন তাঁর পথে

রংপুর প্রতিনিধি:
প্রকাশিত: সোমবার, ২৩ আগষ্ট, ২০২১, ১২:১২
গাভির খামারে সফল মাহামুদুল, গ্রামের অন্যরাও হাঁটছেন তাঁর পথে

নিজের খামারে গাভিকে খাবার দিতে ব্যস্ত তারাগঞ্জ উপজেলার ফরিদাবাদ গ্রামেরমাহামুদুল।  মাস্টার্স পাস করে সহপাঠীরা যখন চাকরির জন্য ছুটছিলেন, মাহামুদুল হক তখন হাঁটলেন ভিন্ন পথে। গ্রামে ফিরে গড়ে তুললেন গাভির খামার। ১০ বছরের মাথায় এখন তাঁর মাসিক আয় প্রায় ৭০ হাজার টাকা। তাঁর দেখানো পথে হেঁটে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ফরিদাবাদ গ্রামের অন্য তরুণ–যুবকেরাও।

উপজেলা সদর থেকে চার কিলোমিটার দূরে ফরিদাবাদ গ্রামের মাহামুদুল হকের বাড়ি। গ্রামে ঢুকেই চোখে পড়ে মাঠজুড়ে অসংখ্য গাভি আর বাছুর চড়ে বেড়াচ্ছে। গ্রামের নারী-পুরুষেরাও যে যাঁর মতো কর্মব্যস্ত। কেউ খামার পরিষ্কার ও গাভিকে গোসল করাচ্ছেন। কেউ গাভির দুধ সংগ্রহ করছেন।

মাহামুদুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, তিনি গাভির দুধ সংগ্রহে ব্যস্ত। কিছুক্ষণ পর খামার থেকে বেরিয়ে এলেন। এরপর গাভির খামার করার শুরুর গল্প শোনালেন। মাহামুদুল হক জানান, ২০০৯ সালে তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজের মার্কেটিং বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাস করেন। এরপর চাকরির পেছনে না ছুটে নিজে কিছু একটা করার কথা ভাবেন। ২০১০ সালে তিনি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার জাদুলস্কর গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান। সেখানে বড় বড় গাভির খামার দেখে এসে গাভি পালনের পরিকল্পনা করেন। বিষয়টি নিয়ে মাহামুদুল তাঁর বাবা মোজাহারুল ইসলামের সঙ্গে পরামর্শ করেন। একই বছরের জুনে নিজের জমানো ২০ হাজার এবং বাবার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে দুটি শংকর জাতের বকনা বাছুর কেনেন।

বছর তিনেক পর বাছুর দুটি গাভিতে পরিণত হয়। প্রতিদিন ৩০ লিটার দুধ দিতে শুরু করে। এ দুধ বিক্রি করে খরচ বাদে দিনে প্রায় ৪০০ টাকা আয় হয়। এভাবে ২ বছরে আরও চারটি শংকর জাতের গাভি কেনেন। ছয়টি গাভি দিয়ে শুরু করেন ডেইরি খামার। বর্তমানে মাহামুদুলের খামারে দেশি-বিদেশি গাভি মিলে মোট গাভির সংখ্যা ২৬টি। প্রতিদিন খামার থেকে গড়ে ১৪০-১৫০ লিটার দুধ পান। প্রতি লিটার দুধ ৪০ টাকায় বিক্রি করে খরচ বাদে দৈনিক দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা পান। বছরে ২ লাখ টাকার গাভিও বিক্রি করেন তিনি।

মাহামুদুল জানান, খামারের আয়ের টাকায় আবাদি জমি কিনেছেন। মাছ চাষের জন্য খনন করেছেন পুকুর। গাভির খামারও করেছেন পাকা। বাড়িতে বসিয়েছেন বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। আম, কাঁঠাল, লিচু, পেঁপেগাছ ও শাকসবজি লাগিয়েছেন বাড়ির চারদিকে।

মাহামুদুল একজন আর্দশ খামারি। সে গাভির খামার করে যে সাফল্য অর্জন করেছে, তা অবিশ্বাস্য। স্থানীয় লোকজন জানান, গাভি পালন করে মাহামুদুল শুধু নিজের ভাগ্যই বদল করেননি। অন্যে যুবকদেরও পরামর্শ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। গ্রামের মাহাবুব রহমান, একরামুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, দেলওয়ার হোসেন, মিনহাজুল ইসলাম, আবু বক্করসহ অনেকে ছয়-সাত বছর ধরে গাভি পালন করে এখন অনেকেই ডেইরি খামারের মালিক।

২০০টি গাভির খামার করারও স্বপ্ন আছে মাহামুদুলের। বেকার তরুণেরা চাকরির পেছনে না ছুটে খামার করে নিজেরা স্বাবলম্বী হবেন, এমন স্বপ্নও দেখেন তিনি।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফরহাদ নোমান বলেন, ‘আমি মনে করি, উদ্যম ও একাগ্রতাই মাহামুদুলের সাফল্যের মূল কারণ। আমি বেশ কয়েকবার তাঁর খামার পরিদর্শন করেছি। যেকোনো সমস্যায় আমরা তাঁর পাশে থাকি। শৃঙ্খলা ও পরিচ্ছন্নতায় তাঁর খামার অন্য খামারিদের কাছে উদাহরণ হতে পারে। তা ছাড়া তাঁর দেখানো পথে খামার করে তারাগঞ্জের অনেক তরুণ এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন।’

সয়ার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আজম বলেন বলেন, ‘মাহামুদুল একজন আর্দশ খামারি। সে গাভির খামার করে যে সাফল্য অর্জন করেছে, তা অবিশ্বাস্য। দেশের শিক্ষিত বেকার যুবকদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে।’

মাহামুদুল হক বলেন, সবাই লেখাপড়া শেষ করে চাকরির জন্য ছোটাছুটি করেন। কিন্তু ইচ্ছা থাকলে গাভির খামার করে আয় করা যায়, খামারেও লাভ আছে, মনের আনন্দ আছে, আছে ।
 

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জিয়াউল হক
চেয়ারম্যান: মিসেস নাজমা হক
ঠিকানা: শাঁহ আলী টাওয়ার (৩য় তলা)
৩৩, কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ ।

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি ।
©২০২১ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । আমাদেরকণ্ঠ২৪ ডট কম, জিয়া গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান ।
কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন নাম্বার CRW-24516